বেকারের প্রেম কাহিনী !

Sunday, June 16, 2013 0 comments

বেকারের প্রেম কাহিনী !
পাশের বাসার নীতুর জন্য অবুঝ মনের কুসুম কুসুম ভালবাসা ব্যাপক ভাবে ঢেউ তুললেও বলা হয়নি-মেয়ে,তোকে ভালবাসি।নীতুদের ফ্যামিলির সাথে আমাদের ফ্যামিলির চমৎকার সম্পর্ক থাকলেও নীতুর সাথে আমার সম্পর্ক কখনই ভাল ছিল না।আমাকে একদম সহ্য করতে পারেনা।পাশ দিয়ে হেঁেট গেলেও কোন না কোনো ছুতো তুলে ১০০টা কথা শুনিয়ে দিত।আমার সাইকেলের চাকার হাওয়া ছেড়ে দেওয়া নীতুর নিয়মিত রুটিন ছিল।একবার বেশ সুন্দর করে জিজ্ঞাসা করলাম,কেন সাইকেলের হাওয়া ছেড়ে দেয়।কোমরে ওড়না পেছিয়ে ঝগড়ার স্টাইলে নীতুর অভিযোগ,আমি নাকি সাইকেল চালিয়ে নীতুদের বাসার সামনে দিয়ে যাবার সময় অকারণে বেল বাজিয়ে ওর পড়ালেখার ডির্ষ্টাব করি।ওদের বাসার সামনে দিয়ে দিনের ভেতর শত শত রিক্সা যাবার সময় বেল বাজায় তখন ওর ডির্ষ্টাব হয়না আর আমি বেল বাজালে ডির্স্টাব হয় !ইচ্ছা হয়েছিল কষে একটা চড় দিয়ে বলতে,তুই বাসার ভেতর থেকে কিভাবে বুঝিস আমার সাইকেলের বেল নাকি কোন রিক্সার বেল।কিন্তু,মনের ইচ্ছা আর কথা মনের ভেতরেই চাপা দিলাম।কারণ,ডজন ডজন ফুল কিনে দেওয়ার সাহস হয়নি যাকে তাকে দেব চড়!

আমার চড় দেওয়ার সাহস না হলেও নীতু একদিন ঘরে এসে আমাকে ঠিকই চড় বসিয়ে দিল।অপরাধ,নীতুর বান্ধবী মিতাকে দেখলে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকি।শুধু তাই না গার্লস কলেজের আশপাশে নাকি নিয়মিত ঘুরঘুর করি।নীতুকে যেখানে ভাল করে দেখার সাহস হয়না সেখানে মিতার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকব আমি! গার্লস কলেজের সামনে দিয়ে ঘুরঘুর করা তো দূরে থাক যখন কলেজ ছুটি হয় তখন আশপাশ দিয়েও হাঁিটনা! চড় খেয়েও কেন চুপ করে আছি এই অপরাধে (!) আরেকটি চড় বসিয়ে দিয়ে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে আমার গায়ের টিশার্টটা একটানে ছিঁড়ে ফেলল।সে যাত্রায় আম্মু এসে যাওয়ায় রক্ষা পেয়েছিলাম। না হয় কপালে আরো চড়,কিল,গুসি ছিল।

প্রেমের মরা জলে না ডুবলেও নীতুর জন্য একবার জলে ডুবে মরতে মরতে অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছি।ইন্টার ফাইনাল পরীক্ষার পর আমরা সবাই গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলাম।আমাদের সাথে নীতুরাও গেল আমাদের গ্রাম দেখতে।সেদিন বিকেলের নাস্তা শেষে ঘর থেকে বের হয়েছি এমন সময় পুকুরের দিক থেকে চাচাত বোন মিথি দৌড়ে এসে বলল ‘আপু পানিতে পড়ে গেছে আপুকে বাঁচাও বাঁচাও’।দৌড়ে গিয়ে দেখি পুকুরের মধ্যে নীতু হাত-পা ছুড়ঁছে।ডুবু ডুবু অবস্থা।আমার সামনে পানিতে ডুবে নীতু মরে যাবে আর আমি পুকুর পাড়ে দাঁিড়য়ে দাঁড়িয়ে দেখব! মনের মধ্যে বাংলা সিনেমার নায়কের ভাব জেগে উঠতেই নায়কের মত জুতা না খুলেই মোবাইল সহ পুকুরে দিলাম ঝাঁপ।ঝাঁপ দেবার পরমূহর্ত্বেই মনে পড়ল ,হায়! হায়! করলাম কি ?আমিও তো সাঁতার জানিনা।আমাকে কে বাঁচাবে!কিন্তু দেরী যা হবার হয়ে গেছে।হাত-পা নাড়াচাড়া করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পেটে পানি ঢুকে বেহাল দশা হয়ে জ্ঞান হারাতে হারাতে লক্ষ্য করলাম নীতু মিটিমিটি হাসতে হাসতে আমার দিকে সাঁতার কেটে আসছে !আমি জ্ঞান হারাচ্ছি আর নীতু হাসছে!

যখন জ্ঞান ফিরল নিজেকে আবিষ্কার করলাম উঠানে শুয়ে আছি।জ্ঞান ফিরতেই সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।অবাক বিস্ময়ে চেয়ে দেখি নীতু রাগের ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। যার পানিতে ডুবে যাবার নাটকে বিশ্বাস করে বাঁচাতে গিয়েই মরতে বসেছিলাম আমি বেঁচে যাওয়ায় কোথায় তার চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক দেখব তা না উল্টো চোখ-মুখ রাগে ফেটে যাচ্ছে! না,পৃথিবীতে প্রেম ভালবাসা বলে কিছু নেই।সেই থেকে নীতুর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলাম।পাক্কা ৪বছর পর গতকাল কথা হল নীতুর সাথে।বলল,‘শোন ১লা বৈশাখ আমার বিয়ে।তোকে দিয়ে তো কিছুই হবে না।তাই মেয়ে হয়েও লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে তোকে বলতে হচ্ছে আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আর তুই চেয়ে চেয়ে দেখছিস।তুই আজীবন গাধা হয়েই থাকবি।বললাম,‘তুই তো আমাকে ভালবাসিসনা।শুধু দেখছি না তোর বিয়েতে নাচার প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছি?’ ঠাস করে আমার গালে চড় বসিয়ে দিয়ে বলল,‘ না গাধা না তুই রামছাগল হয়েই থেকে যাবি আজীবন! মন দিয়ে শোন,তোর হাতে কয়েকদিন সময় আছে।কবুল বলার এক সেকেন্ড আগেও যদি ডাকিস আমি তোর হাত ধরে বিয়ের আসর ছেড়ে তোকে আজীবন কিল , গুসি , চিমটি দিতে চলে আসব।তোর তুই,তুমি আপনি হয়েই তোকে জ্বালিয়ে মারব’ বলে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেল।

এই যুগের প্রেমিকারা যেখানে প্রেমিককে ছ্যাঁকা দিয়ে আরেকজনের বউ হয়,সেখানে নীতু বউ হয়ে আসতে চাইলেও আমার করার কিছু নেই।মনে ভালবাসা থাকলেও চাকরি নেই।কারণ,এই দেশে চাকরির জন্য আর কিছু লাগুক না লাগুক মামা,খালা কিংবা সরকার দলীয় সার্টিফিকেট লাগে।১লা বৈশাখ নীতু যাবে শ্বশুর বাড়ি।আর আমি যাব আজ যাব গ্রামের বাড়িতে।১লা বৈশাখে সবাই যখন ভালবাসার মানুষটির হাত ধরে বৈশাখের আনন্দে মাতোয়ারা হবে সেদিন আমি পুকুর পাড়ে বসে স্মৃতি হাতড়ে বেড়াব।নীতু হয়ত কোনদিন জানবে না গ্রামের বাড়িতে যাবার ভাড়ার টাকাটা বোনের ভ্যানিটি ব্যাগ থেকেই মেরে দিতে হবে ! এবারের ১লা বৈশাখের হালখাতায় চায়ের দোকানের বাকী টাকা একদিন না একদিন ঠিকই পরিশোধ করতে পারব।কিন্তু,জীবনের কাছে ভালবাসা বাকীই থেকে যাবে আজীবন!

আপুরা বুজছেন তো কিছু ?????? মনের মানুষ যদি এমন টাইপ এর হয় তাইলে তো গেসেন .........।। [:p]

0 comments:

Post a Comment